বঙ্গনিউজবিডি ডেস্ক: শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ফরিদ উদ্দিন আহমেদ তার দায়িত্ব চালিয়ে যাওয়ার নৈতিক অধিকার হারিয়ে ফেলেছেন। তার কোনোভাবেই আর এই দায়িত্বে (উপাচার্য) থাকা উচিত না।
বাংলাদেশের সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় সমূহের সংগঠন উপাচার্য পরিষদের সাবেক সভাপতি ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. জসিমউদ্দিন আহমেদ এই অভিমত প্রকাশ করে বলেছেন, তিনি স্বেচ্ছায় দায়িত্ব ছাড়তে রাজি না হলে সরকারের উচিত হবে তাকে দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দেয়া। তিনি বলেন, একটি উচ্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের স্থিতিশীল পরিবেশই সরকারের কাছে সবচেয়ে গুরুত্ব পাওয়ার কথা।
কানাডার বাংলা পত্রিকা ‘নতুনদেশ’ এর প্রধান সম্পাদক শওগাত আলী সাগরের সঞ্চালনায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচারিত ‘শওগাত আলী সাগর লাইভের’ আলোচনায় যোগ দিয়ে তিনি এই কথা বলেন। স্থানীয় সময় মঙ্গলবার রাতে এই আলোচনাটি অনুষ্ঠিত হয়।
আলোচনায় যুক্ত হয়ে ডাকসুর সাবেক এজিএস নাসির উদ দুজা একই মতামত দেন। দুজনেই আন্দোলনে সমর্থন দেয়ার কারণে গ্রেফতারকৃত সাবেক শিক্ষার্থীদের মুক্তি ও সব ধরনের মামলা প্রত্যাহারের দাবি জানান।
আলোচনায় শাবিপ্রবির শাহ পরান হল ছাত্র সংসদের সাবেক এজিএস এবং কানাডায় বসবাসরত শাবিপ্রবির সাবেক শিক্ষার্থীদের সংগঠন সাস্টিয়ান কানাডার সাধারণ সসম্পাদক নিতু দত্তও বক্তব্য রাখেন।
উপাচার্য পরিষদের সাবেক সভাপতি ড. জসিম উদ্দিন আহমেদ বলেন, শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ঘটনায় সরকার কোনো পক্ষ নয়। এখানে সরকারের পরাজয়ের কোনো ব্যাপার নেই। বরং রাষ্ট্রের অভিভাবক হিসেবে স্থিতিশীলতার অনুকূল পদক্ষেপ নেওয়াটাই সরকারের কাজ।
তিনি বলেন, বর্তমান সরকারের আমলেই নানা অভিযোগে বেশ কয়েক উপাচার্যকে দায়িত্ব থেকে সরে যেতে হয়েছে। কেউ কেউ দুর্নীতির দায়ে গ্রেফতার হয়েছেন, কয়েকজনের বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশনে এখনো মামলা চলছে। একটি উচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের স্থিতিশীলতার শর্তকে প্রাধান্য দিয়েই শাবিপ্রবির বিষয়ে সরকারের পদক্ষেপ নেয়া দরকার।
উপাচার্য পরিষদের বিবৃতির সমালোচনা করে পরিষদের সাবেক সভাপতি বলেন, কোনো সময়ই এই সংগঠন অন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিস্থিতি নিয়ে কোনো ধরনের বিবৃতি দেয়নি। তারা কীভাবে একজন উপাচার্যের পক্ষে অবস্থান নিলো সেটি বোধগম্য নয়।
তিনি বলেন, উপাচার্য পরিষদ ছাত্রদের উপর পুলিশী নির্যাতনের ব্যাপারেও কথা বলতে পারতো, আলোচনার মাধ্যমে পরিস্থিতি সমাধানের আহ্বান জানাতে পারতো। ডাকসুর সাবেক এজিএস নাসির উদ দুজা অবিলম্বে উপাচার্য ফরিদউদ্দিনের পদত্যাগ দাবি করে বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য হিসেবে তো বটেই শ্রেণীকক্ষে পাঠদান করার নৈতিক অধিকারও তার আর নাই।
সাধারণ শিক্ষার্থীদের আন্দোলনকে ঘিরে ষড়যন্ত্র, তৃতীয়পক্ষ খোঁজার তীব্র সমালোচনা করে সাবেক এই ছাত্রনেতা বলেন, ভিসি, শিক্ষক, শিক্ষার্থী সবাই মিলে এখানে তো একটিই পক্ষ। এখানে আর কোনো পক্ষ খোঁজার দরকার কী?
তিনি বলেন, ঢাকা থেকে গিয়ে ড. মুহাম্মদ জাফর ইকবাল যদি শিক্ষার্থীদের বুকে জড়িয়ে ধরতে পারেন, উপাচার্য তার বাংলো থেকে বের হয়ে গিয়ে শিক্ষার্থীদের পাশে দাঁড়াতে পারলেন না কেন?
আলোচনায় অংশ নিয়ে ‘নতুনদেশ’ এর প্রধান সম্পাদক শওগাত আলী সাগর বলেন, জাফর ইকবাল শাবিপ্রবির লাঞ্ছিত, ক্ষুব্দ শিক্ষার্থীদের পাশে দাঁড়িযেছেন,কোমলমতি শিক্ষার্থীরা তাকে বিশ্বাস করেছেন, তার উপর আস্থা রেখেছেন, এই বিশ্বাস, আস্থার যাতে কোনোভাবেই কোনো অসম্মান না হয়। ‘আমরা প্রতারিত হয়েছি’- এমন ভাবনা কখনোই যেনো তাদের মনে ঠাঁই না পায়- সেটি নিশ্চিত করতে হবে।