পানিবন্ধী পরিবারের মানুষ চরম দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন। অনেক ঘরে পানি প্রবেশ করায় খাবার রান্না করা তো দূরের কথা পরিবারের সদস্যদের বিশ্রামের জায়গা নেই। এই ভয়াবহ অবস্থায় মানুষ দুর্বিসহ জীবন যাপন করছেন। রয়েছে তীব্র খাবার সঙ্কট। খাবারের জন্য আর্তনাদ করছেন বন্যা কবলিত মানুষ।
বিশ্বনাথ পৌর শহরে আশ্রয় কেন্দ্রগুলোকে বন্যার্তরা কিছু ত্রাণ সহায়তা পেলেও বঞ্চিত রয়েছেন উপজেলার খাজাঞ্চী, অলংকারী, রামপাশা, দৌলতপুর, দেওকলস ও দশঘর ইউনিয়নের বন্যা কবলিত হাজার হাজার মানুষ।
পানিবন্দী এলাকায় দেখা দিয়েছে ঘরে ঘরে পানি। সবাই ঘরবন্দী হয়ে মানবেতর দিন কাটাচ্ছে। ভালো নেই আশ্রয় কেন্দ্রগুলোতে থাকা লোকজনও। করুণ ও অসহায় অবস্থায় আছে মানুষ। পুরো উপজেলা টানা তিন দিন ধরে বিদুৎহীন। মুঠোফোন নেটওয়ার্ক অকার্যকর, বন্ধ ইন্টারনেট সেবাও। পুরো উপজেলাতেই পানি ঢুকেছে। প্রতিটি বাড়িঘর প্লাবিত হয়েছে। হাঁটু থেকে গলাসমান পানি। খাবার ও সুপেয় পানির তীব্র সংকট, পাওয়া যাচ্ছে না বিশুদ্ধ জলও। দ্রুত এর সমাধান করা না গেলে ভয়াবহ মানবিক বিপর্যয়ের আশঙ্কা করছেন স্থানীয় লোকজন।
সরকারের পাশাপাশি দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে বৃত্তবান লোকজন ও সেবামূলক সংগঠনগুলোকের পক্ষ হতে অনেকেই বিশ্বনাথে ত্রাণ নিয়ে আসলেও উপজেলা সদরের সাথে যোগাযোগ ব্যবস্থা বিচ্ছিন্ন থাকায় এবং নৌকা না থাকায় প্রত্যন্ত এলাকাগুলোকে দুর্গত মানুষের কাছে তারা ত্রাণ পৌছাতে পারছেন না।
সোমবার সেনাবাহিনীর সহযোগিতায় হিউমেনিশন রিলিফ প্রোগ্রামের আওতায় ওয়ার্ল্ড সেন্ট্রাল কিচেন অর্গানাইজেসন এর পক্ষ হতে সিলেট-২ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ইয়াহ্ইয়া চৌধুরী এহিয়া উপজেলার কিছু এলাকায় দুর্গতদের মাঝে রান্না করা খাবার বিতরণ করেছেন।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ও পৌর প্রশাসক নুসরাত জাহান জানিয়েছেন, গতকাল সোমবার পর্যন্ত উপজেলায় বন্যার্তদের জন্য ৩০ মেট্রিকটন চাল ও শুকনো খাবারের জন্য ৭ লক্ষ টাকা সরকারীভাবে বরাদ্দ হয়েছে। যা প্রয়োজনের তুলনায় খুবই কম।
এদিকে, বন্যায় এপর্যন্ত উপজেলায় পানিতে ডুবে ৬ জনের মৃত্যু এবং ১ শিশু কন্যা নিখোঁজ হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। গত শুক্রবার বিকেলে রামপাশা ইউনিয়নের আমতৈল জমশেরপুর গ্রামের জামাল উদ্দিনের স্ত্রী তার এক বছরের শিশু কন্যাকে নিয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে থেকে নৌকায় করে বাড়িতে ফেরার পথে রামপাশা বাজারের পশ্চিমের হাওরে নৌকা ডুবে যায়। এসময় ওই শিশু কন্যা পানির স্রোতে মায়ের হাত থেকে চলে যায়। এখনো নিখোঁজ রয়েছে রয়েছে।
নিহতদের মধ্যে শুক্রবার (১৭ জুন) দুপুরে উপজেলার খাজাঞ্চী ইউনিয়নের বাওনপুর গুচ্ছগ্রামের বাসিন্দা শামিম আহমদ (৬০) আশ্রয়কেন্দ্র হতে শ্বশুর বাড়িতে ফেরার পথে পানিতে ডুবে গিয়ে নিখোঁজ হন। এরপর গত রবিবার দুপুরে স্থানীয় মরা সুরমা নদীর তীরবর্তী মিরেরগাঁও গ্রাম থেকে শামিম আহমদের লাশ ভাসমান পাওয়া যায়। একই দিন বিকেলে খাজাঞ্চী ইউনিয়নের চন্দ্রগ্রাম গ্রামের অমর চন্দ্র দাসের পুত্র অনিক দাস উরফে মোহন দাস (২০) বাড়ি থেকে সিলেট শহরে যাওয়ার পথে বাড়ির পার্শ্ববর্তী গ্রামের মসজিদের সামনে স্রোতের পানিতে নিখোঁজ হন। রবিবার বিকেলে তার লাশ পাওয়া যায়।
শুক্রবার দুপুরে দশঘর ইউনিয়নের বাইশঘর গ্রামের মতছিন আলীর স্ত্রী লিমা বেগম (৩৫) ও শালিকা সিমা বেগম (২৫) বাড়ির পাশ্ববর্তী খালে নৌকা ডুবিতে নিখোঁজ হন। ওই দিন বিকেলে তাদের লাশ পাওয়া যায়। একই দিন পানিতে ডুবে মারা যান উপজেলার সিংরাওলী গ্রামের ইয়াসিন আলীর পুত্র আলতাবুর রহমান (৪৫)। লামাকাজী ইউনিয়নের দিঘলী দত্তপুর গ্রামের সিএনজি চালক অজিত রায় (৩৫) নিজ বসতঘরেই পানিতে ডুবে মারা যান।