বঙ্গনিউজবিডি ডেস্ক : পরকীয়ার সম্পর্কের জের ধরেই আজহারকে হত্যা করে ছয় টুকরো করেন রাজধানীর দক্ষিণখানের সরদারবাড়ি জামে মসজিদের ইমাম মাওলানা মো. আব্দুর রহমান। আর এই হত্যাকাণ্ডের মূল পরিকল্পনাকারী ছিলেন নিহত আজহারের স্ত্রী আসমা আক্তার (২২)।
বুধবার (২৬ মে) সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে র্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন এ তথ্য জানিয়েছেন।
তিনি বলেন, নিহত আজহারের স্ত্রী আসমাকে রাজধানীর আব্দুল্লাহপুর থেকে মঙ্গলবার (২৫ মে) রাতে গ্রেফতার করা হয়েছে। গ্রেফতারের পর প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে চাঞ্চল্যকর তথ্য আমরা পেয়েছি। আজহারের স্ত্রী এ হত্যাকাণ্ডের মূল পরিকল্পনাকারী। মসজিদের ইমাম আব্দুর রহমানের সঙ্গে আসমার প্রেমের সম্পর্ক তৈরি হয়। আজহারকে সরিয়ে দেওয়ার জন্য মসজিদের ইমামকে ভাড়াটে কাউকে দিয়ে হত্যা করার জন্য বলেন আসমা। কিন্তু মসজিদের ইমাম ভাড়াটে কাউকে দিয়ে হত্যা না করিয়ে নিজেই হত্যা করেন।
তিনি আরও বলেন, গ্রেফতার দক্ষিণখানের সরদার বাড়ি জামে মসজিদের ইমাম মাওলানা আব্দুর রহমানের সঙ্গে নিহত আজহারের পারিবারিক সম্পর্কের মতো ছিল। আজহার-আসমা দম্পতির চার বছরের শিশু সন্তানকে আরবি পড়াতেন ইমাম আব্দুর রহমান। নিহত আজহারকেও আরবি পড়াতেন তিনি। সেই সুবাদে গত ৫-৬ মাস ধরে তাদের বাসায় আসা-যাওয়া ছিল ইমামের।
বাসায় আসা-যাওয়ার এক পর্যায়ে আজহারের স্ত্রী আসমার সঙ্গে মসজিদের ইমামের অবৈধ সম্পর্ক তৈরি হয়। অবৈধ সম্পর্ক বাস্তবায়নের উদ্দেশ্যে আসমা আক্তারই আজহারকে হত্যা করার পরিকল্পনা করেন।
জানা যায়, আগে থেকে পরিচয় থাকার সুবাদে গত ১৯ মে রাতে আজহারকে মসজিদে ডেকে নেন ইমাম আব্দুর রহমান। সেখানেই কোরবানির পশু জবাই করার ছুরি দিয়ে হত্যা করা হয় আজহারকে। এরপর ইমাম আব্দুর রহমানের শয়নকক্ষে আজহারের মরদেহ ছয় খণ্ড করে সেপটিক ট্যাংকের লুকিয়ে রাখা হয়।
এর আগে, মঙ্গলবার (২৫ মে) সন্ধ্যায় রাজধানীর আব্দুল্লাহপুর এলাকা থেকে নিহতের স্ত্রী আসমা আক্তারকে গ্রেফতার করে র্যাব-১।
এদিকে গতকাল মঙ্গলবার বিকেলে কারওয়ান বাজার র্যাবের মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে চাঞ্চল্যকর এ হত্যাকাণ্ডের ঘটনার বর্ণনা দেন র্যাব-১ এর অধিনায়ক (সিও) লেফটেন্যান্ট কর্নেল আব্দুল মুত্তাকিম।
তিনি বলেন, রাজধানীর দক্ষিণখানের বাসিন্দা আজহারের স্ত্রীর প্রতি কুনজর ছিল দক্ষিণখানের সরদার বাড়ি জামে মসজিদের ইমাম মাওলানা আব্দুর রহমানের। বিষয়টি জানার পর ইমামকে নিষেধ করতে মসজিদে গিয়েছিলেন তিনি। সেখানে যাওয়ার পর বাকবিতণ্ডার একপর্যায়ে ধারালো ছুরি দিয়ে আজহারের গলায় আঘাত করেন ইমাম।
মৃত্যু নিশ্চিত হওয়ার পর আজহারের মরদেহ ছয় টুকরো করা হয়। এরপর মসজিদের সেপটিক ট্যাংকে মরদেহের টুকরোগুলো লুকিয়ে রাখেন ইমাম। ইমাম পুরো কাজটি করেন দক্ষিণখানের সরদার বাড়ি জামে মসজিদের তার শয়নকক্ষে।
ট্যাংক থেকে দুর্গন্ধ ছড়ালে মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ৯টার দিকে আজহারের মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। হত্যায় জড়িত থাকার অভিযোগে মাওলানা মো. ইমাম আব্দুর রহমানকে (৫৪) গ্রেফতার করে র্যাব।
কী নিয়ে বাকবিতণ্ডা হয়েছিল জানতে চাইলে র্যাব-১ এর অধিনায়ক আব্দুল মোত্তাকিম বলেন, ইমাম রহমান বলেছেন, আজহার অভিযোগ করেছিলেন তার স্ত্রীর দিকে ইমামের কুনজর রয়েছে। কিন্তু আজহারের স্ত্রীর সঙ্গে কোনো সম্পর্ক থাকার কথা অস্বীকার করেছেন ইমাম।
এর আগে র্যাব জানিয়েছিল, হত্যাকাণ্ডে নিহতের স্ত্রী জড়িত কি-না তা জানতে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। ঘটনার একদিন আগে স্ত্রী আসমা তার গ্রামের বাড়ি টাঙ্গাইলে চলে যান। তিনি ঘটনার আগেরদিন থেকে টাঙ্গাইলেই ছিলেন কি-না এবং হত্যায় তার সম্পৃক্ততা সম্পর্কে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।
ধারালো অস্ত্রগুলো কীভাবে এলো জানতে চাইলে লেফটেন্যান্ট কর্নেল আব্দুল মুত্তাকিম বলেন, তিনি (ইমাম) দীর্ঘদিন ধরে ওই মসজিদে চাকরি করতেন। কোরবানির সময় পশু জবাই করার জন্য তিনি এগুলো রাখতেন। সেই অস্ত্র দিয়েই এই হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটে।
প্রসঙ্গত, সোমবার (২৪ মে) মসজিদের সিঁড়িতে রক্তের দাগ ও সেপটিক ট্যাংক থেকে দুর্গন্ধ বের হচ্ছিল। এছাড়া আজহার ১৯ মে থেকে নিখোঁজ ছিলেন। এমন ঘটনায় অনুসন্ধান শুরু করে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী। পরে র্যাব ইমামকে আটক করে এবং জিজ্ঞাসাবাদে হত্যার ঘটনা জানতে পারে। এ সময় অভিযুক্তের কাছ থেকে হত্যায় ব্যবহৃত তিনটি চাকু ও মোবাইল উদ্ধার করা হয়।