কর্মকর্তারা বলছেন বুড়িমারী, বাংলাবান্ধাসহ বিভিন্ন সীমান্ত এলাকা থেকে প্রতিদিন বিভিন্ন প্রয়োজনে রংপুরে আসা-যাওয়া করছেন। সীমান্ত দিয়ে বৈধপথে দেশে আসাদের কোয়ারেন্টিনে রাখা হলেও সীমান্তবর্তী মানুষগুলো তাদের সংস্পর্শে থাকছেন। এছাড়া আসন্ন কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে সীমান্তে অবৈধপথে চোরাকারবারীরা যাতায়াত করেন। তাদের মাধ্যমেও করোনা ছড়িয়ে পড়তে পারে।
স্বাস্থ্য বিভাগের মতে রাজশাহী ও চাপাইনবাবগঞ্জের মত রংপুরও করোনা ঝুঁকিতে রয়েছে। রংপুর বিভাগে পাঁচটি স্থলবন্দর দিয়ে ভারত-বাংলাদেশের মানুষের যাতায়াত রয়েছে। বন্দরগুলো হল- লালমনিরহাটের বুড়িমারী, পঞ্চগড়ের বাংলাবান্ধা, দিনাজপুরের হিলি ও রাধিকাপুর এবং কুড়িগ্রামের রৌমারীর তুরারোড। এসব সীমান্ত দিয়ে বৈধপথে কিছু লোক আসলেও তাদের কোয়ারেন্টিনে রাখা হচ্ছে। তবে কোয়ারেন্টিনে থাকা অবস্থায় তাদের আত্মীয়স্বজনরাও তাদের সাথে দেখা করতে যাচ্ছেন। আবার তারা ফিরে আসছেন নিজ বাড়িতে। তারা কতটুকু নিরাপদ এ নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে।
এদিকে গত ২৪ ঘন্টায় রংপুর বিভাগে ২৮২ জনের দেহের নমুনা পরীক্ষা করে ৪৭ জনের দেহে করোনা শনাক্ত হয়েছে। এ পর্যন্ত এক লাখ ৩২ হাজার ৬৬২ জনের নমুনা পরীক্ষা করে করোন শনাক্ত হয়েছে ১৮ হাজার ৮৯১ জনের। ২৪ ঘন্টায় মৃত্যু হয়েছে দুইজনের। মোট মৃত্যুর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৩৯২ জনে। করোনা শনাক্তের হার ১৬ দশমিক ৬৭ শতাংশ এবং মৃত্যুর হার ২ দশমিক ৮ শতাংশ।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বুড়িমারী-পাটগ্রাম থেকে প্রতিদিন যাত্রীবাহী মাইক্রোবাস রংপুরে আসে অন্তত ৫০টি। দিন শেষে আবার ওই মাইক্রোগুলো যাত্রীদের নিয়ে ফিরে যায়। প্রতি মাইক্রোতে ১০জন করে হলেও শুধুমাত্র বুড়িমারী স্থলবন্দর এলাকা থেকে প্রতিদিন ৫০০ মানুষ রংপুরে আসা-যাওয়া করে। পাটগ্রাম থেকে গতকাল রবিবার রংপুর মেডিক্যালে চিকিৎসা নিতে আসা আইয়ুব আলী নামের এক যাত্রী জানান, প্রায় প্রতি সপ্তাহেই তিনি চিকিৎসাসহ কোন না কোন কাজে রংপুরে আসেন। মাইক্রোবাসে যাত্রী আনা-নেওয়া করায় রংপুরের সঙ্গে যোগাযোগ অনেকটা সহজ হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, যারা যে মাইক্রোতে রংপুরে আসেন দিন শেষে তারা ওই মাইক্রোতেই ফিরে যান। আসা-যাওয়া জনপ্রতি ভাড়া দিতে হয় ৬০০ টাকা।
বুড়িমারী স্থলবন্দরের ব্যবসায়ী ইদ্রিস আলী গতকাল মাইক্রোবাসে রংপুরে আসেন কাপড়ের দোকানের মালামাল ক্রয়ের জন্য। তিনি জানান, বুড়িমারী থেকে বাসে লালমনিরহাট হয়ে অন্তত ৫০ কিলোমিটার বেশি ঘুরে রংপুরে যেতে হয়। রাস্তাও খারাপ, এতে কাজ শেষ করে ফিরে যাওয়া কঠিন হয়ে পড়ে। সে কারণে নিয়মিত মাইক্রোতে তিস্তা ব্যারেজ হয়ে রংপুরে আসেন। তবে করোনাকালে সীমান্ত এলাকা থেকে এভাবে আসা-যাওয়ায় ঝুঁকি বাড়ে-এ প্রসঙ্গে কোন সদুত্তোর দিতে পারেননি তিনি।
এদিকে পাটগ্রাম উপজেলা প্রশাসন ও বুড়িমারী ইমিগ্রেশন পুলিশের দেওয়া তথ্যানুযায়ী প্রথম দফায় ২৬ এপ্রিল থেকে পাসপোর্টধারী যাত্রী পারাপার সাময়িক বন্ধ ঘোষণা করা হয় ১৪ দিনের জন্য। পরে গত ৮ মে দ্বিতীয় দফা আরও ১৪ দিন বাড়ানো হয়। তবে ভারতে বাংলাদেশ দূতাবাসের অনুমতি নিয়ে ২৮ এপ্রিল প্রথম দিন ছয় ব্যক্তি দেশে ফেরত আসেন। এরপর পর্যায়ক্রমে গত শনিবার ১৬ জনসহ ৩২৮ জন দেশে ফিরেছেন। তাদেরকে প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টিনে রাখা হয়। এদের মধ্যে পাঁচজন বাংলাদেশির শরীরে করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়। চারজন সুস্থ হয়ে বাড়িতে ফিরেছেন। প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টিন শেষে ছাড়পত্র পেয়েছেন মোট ৯২ জন।
সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী ভিসার মেয়াদ ১৫ দিনের কম থাকা যাত্রীরা দেশে ফিরতে পারবেন। ভারতের কলকাতায় বাংলাদেশি উপ-হাইকমিশনারের কার্যালয় থেকে এনওসিসহ করোনা নেগেটিভ সার্টিফিকেট নিয়ে এ অভিবাসন কেন্দ্র দিয়ে বাংলাদেশ ও একইভাবে ভারতীয় পাসপোর্টধারী যাত্রী যাতায়াত করতে পারবেন এমন নির্দেশনা রয়েছে।
রংপুর বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক ডা. আহাদ আলী জানান, ভারত থেকে যারা আসছেন তাদের কোয়ারেন্টিনে রাখা হচ্ছে। কিন্তু তাদের আত্মীয় স্বজনরা যাতাযাত করছে। এতে ভারতীয় ধরণ সংক্রমণের আশঙ্কা রয়েছে। এছাড়া অবৈধপথে যাওয়া-আসা করা মানুষদের দ্বারাও করোনার ভারতীয় ধরণ ছড়িয়ে পড়ার শঙ্কা রয়েছে।