স্টাফ রিপোর্টার : দেবিদ্বারে জুলাই গণঅভ্যূত্থানে নিহত তরকারী বিক্রেতা শহীদ সাগরের মায়ের হাতে ৫ মাসের গর্ভবতী একটি গাভী তুলে দিলেন উপজেলা প্রশাসন।
মঙ্গলবার (২৪ ডিসেম্বর) রাতে দেবিদ্বার উপজেলার ৩ নং রসুলপুর ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয়ে, ১ নং বড়শালঘর ইউনিয়নের বড়শালঘর গ্রামের শহীদ সাগরের মা’ মোসাম্মৎ বিউটি আক্তার’র হাতে ওই গাভী তুলেদেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নিগার সুলতানা।
উল্লেখ্য ২৪শের জুলাই-এ ছাত্র-জনতার গণঅভ্যূত্থানে ঢাকা মীরপুর ১০ নম্বরে ভ্যানে তরকারী বিক্রেতা ফ্যাসিস্ট আওয়ামী সরকারের পেটুয়া বাহিনীর হাতে গত ১৯ জুলাই গুলিবিদ্ধ হয়ে শহীদ হন সাগর। ক্যান্সারে আক্রান্ত পিতার একমাত্র পুত্র সন্তান শহীদ সাগর(১৮), তার বাবা- মায়ের সাথে ছোট বেলা থেকেই মীরপুর ১-এ ভাড়া বাসায় বসবাস করতেন। তার বাবা বাবুর্চি মো. হানিফ মোল্লা স্থানীয় একটি হোটেলে বাবুর্চির চাকরি করতেন। তিনি একসময় ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে শারীরিকভাবে অসুস্থ্য হয়ে পড়লে বাবুর্চির কাজ ছেড়ে দেন। পরে ওই হোটেলে মেসিয়ারের কাজ শুরু করেন। পিতার অসুস্থ্যতায় অভাবের টানপোড়নে সংসারের হাল ধরেন সাগর। জুলাই ছাত্র-জনতার গণঅভ্যূত্থানে সাগর শহীদ হওয়ার পর সাগরের মা তার দুই বোনকে নিয়ে দেশের বাড়িতে চলে আসেন।
জাতীয়তাবাদী মহিলা দল কুমিল্লা উত্তর জেলা সভাপতি ও দেবিদ্বার উপজেলা পরিষদের সাবেক মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান সুফিয়া বেগম বলেন, সাগর ভ্যানে করে করে তরিতরকারী বিক্রি করতেন। তার দুই বোন বৃষ্টি আক্তার(২০) ও আফরুজা আক্তার মিম(১৫) লেখা পড়া করতেন। অভাবের কারনে বৃষ্টি আক্তার এসএসসি পাশ করার পর লেখাপড়া বন্ধ হয়ে যায়। অর্থ সংকটে তার বিয়েটাও সম্পন্ন করতে পারেনি পরিবারটি। আফরুজা আক্তার মিমকে এবার বড়শালঘর ইউএমই উচ্চ বিদ্যালয়ে অষ্টম শ্রেণীতে ভর্তি করানো হয়।
সাগরের মা’ মোসঃ বিউটি আক্তার জানান, সংসারের ভরনপোষনে এখনো ক্যান্সারে আক্রান্ত আমার স্বামী মীরপুর হোটেলের মেসিয়ারের কাজ করছেন। গত সেপ্টেম্বর মাসের মাঝামাঝি সময়ে চট্রগ্রাম বিভাগের ডিআইজি আহসান হাবিব পলাশ’র আহবানে কুমিল্লা জেলা পুলিশ সুপারের হল রোমে জুলাই আগস্ট হত্যাকান্ডে শহীদদের পরিবারের সাথে আয়োজিত এক মত বিনীময় সভায়, শহীদ পরিবারের খোঁজ খবর নেন এবং সে ক্ষেত্রে আর্থিক অনটন দূর করতে কার কি প্রয়োজন, জানতে চান। আমি ডিআইজি সাহেবের কাছে একটি গাভী চেয়েছিলাম, ডিআইজি আহসান হাবিব পলাশ আমাকে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার বরাবরে আবেদন করতে বললে আমি আবেদন করি। গত রাতে ৫ মাসের গর্ভবতী ওই গাভীটি আমাকে দেন।
এ ব্যাপারে দেবিদ্বার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নিগার সুলতানা জানান, জুলাই ছাত্র-জনতার গণঅভ্যূত্থানে শহীদ সাগরের মা’কে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ১ লক্ষ ৩৫ হাজার টাকা মূল্যের ৫ মাসের গর্ভবতী একটি গাভী উপহার দিয়েছি। যেহেতু পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি হলেন শহীদ সাগরের পিতা মো. হানিফ মোল্লা, তিনি ক্যান্সারে আক্রান্ত তাই এ অসহায় পরিবারটিকে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সহযোগীতা করা হল। ভবিষ্যতে জুলাই-আগস্ট ছাত্র-জনতার গণঅভ্যূত্থানে শহীদ পরিবারগুলোর মধ্য এ ধরনের থেকে অসহায় কোন পরিবার আবেদন করেন, উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সহযোগীতার চেষ্টা করব।