জেলা প্রতিনিধি রাজবাড়ী মোঃ জাহিদুর রহিম মোল্লা : রাজবাড়ীর কালুখালীতে নিজ ঘর থেকে জলি আক্তার (২৩) নামে এক গৃহবধূর ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। রবিবার (২ মার্চ) দুপুর ১২টার দিকে উপজেলার বোয়ালিয়া ইউনিয়নের বোয়ালিয়া গ্রামের স্বামীর বাড়ির নিজস্ব শোয়ার ঘর থেকে ফ্যানের সঙ্গে ঝুলন্ত অবস্থায় ওই গৃহবধূর মরদেহটি উদ্ধার করা হয়।
জলি আক্তার বোয়ালিয়া গ্রামের সিঙ্গাপুর প্রবাসী মো. জহুরুল ইসলামের স্ত্রী। তার মাসুরা নামে তিন বছর বয়সী এক মেয়ে রয়েছে।
গৃহবধূর পরিবারের লোকজনের দাবি, শ্বশুরবাড়ির লোকজন তাকে হত্যা করে লাশ ফ্যানের সঙ্গে ঝুলিয়ে রেখেছে। তবে পুলিশের ধারণা, তিনি গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেছেন।
জলি আক্তারের শ্বাশুড়ি ঝর্না বেগম বলেন, আমার ছেলে সিঙ্গাপুর থাকে। ছেলের বউ জলির সাথে আমাদের কারও কোন ঝগড়া-বিবাদ ছিল না। শনিবার সন্ধ্যায় জলি সেমাই রান্না করে। আমরা একসাথে মুড়ি দিয়ে সেমাই খাই। রাতে আমি তারাবির নামাজ পড়ার পর জলি আমার মোবাইলে সেহরিতে ওঠার জন্য অ্যালার্ম দিয়ে যায়। সেসময় সে আমাকে বলে তার পেটে ব্যাথা করছে, এজন্য সে রোজা থাকবে না। সেহরিতে যেন তাকে না ডাকি, আমি যেন সেহরিতে আমার মতো রাইস কুকারে ভাত রান্না করে খাই। এই তার সাথে আমার শেষ কথা হয়। এরপর সে তার ঘরে গিয়ে দরজা বন্ধ করে মেয়েকে সাথে নিয়ে শুয়ে পড়ে। সকাল সাড়ে ৮ টার দিকে সে দরজা না খুললে আমি ডাকাডাকি করি। কিন্তু, তার কোন সাড়াশব্দ না পেয়ে জানালা খুলে দেখি জলি ফ্যানের সাথে ঝুলছে। তখন আমি চিৎকার দিলে প্রতিবেশীরা এসে দরজা ভেঙে ভেতরে ঢোকে। পরে থানায় খবর দেওয়া হয়
জলি আক্তারের মেঝ বোন খাদিজা বেগম বলেন, ৫ বছর আগে জহুরুলের সাথে জলির বিয়ে হয়। বিয়ের সময় আমার বাবা জহুরুলকে মোটরসাইকেল, চেইন, ফার্নিচারসহ অনেক কিছু দেয়। এক বছর আগে জহুরুল সিঙ্গাপুর যায়। সিঙ্গাপুর যাওয়ার সময় আমার বড় দুলাভাই তাকে দুুই লাখ টাকা দেয়। জহুরুল সেই টাকা ফেরত দেয়নি, আমার বোনের সাথেও সে কোন যোগাযোগ করে না। এদিকে, আমার বোনের সাথে তার শ্বাশুড়ি সবসময় ঝগড়া করে। আজ (রবিবার) সকাল ১১ টার দিকে বোনের শ্বশুরবাড়ির লোকজন আমাদের ফোন করে জানায়, আমার বোন নাকি আত্মহত্যা করেছে।
তিনি আরও বলেন, আমার বোন আত্মহত্যা করতে পারে না। আমার বোনের শ্বাশুড়ি তাকে হত্যা করে লাশ ফ্যানের সাথে ঝুলিয়ে রেখেছে। বোনের বাচ্চা মেয়েটাকে সে লুকিয়ে রেখেছে, আমাদের কাছে দিচ্ছে না। আমার এর বিচার চাই।
কালুখালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মুহাম্মদ জাহেদুর রহমান বলেন, ঘরের দরজা ভেতর থেকে আটকানো ছিল। পরিবারের সদস্যরা দরজা ভেঙে ভেতরে ঢুকে ঝুলন্ত মরদেহটি দেখতে পেয়ে থানায় খবর দেয়। মরদেহ দেখে ধারণা করা হচ্ছে, ওই গৃহবধূ গলায় ওড়না পেচিয়ে ফাঁস দিয়ে ফ্যানের সঙ্গে ঝুলে আত্মহত্যা করেছেন। মরদেহটি উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য রাজবাড়ী সদর হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়েছে। ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন পাওয়ার পর মৃত্যুর প্রকৃত কারণ জানা যাবে। এ ব্যাপারে থানায় একটি অপমৃত্যু (ইউডি) মামলা দায়ের করা হবে বলেও জানান ওসি।