এসএসসি পরীক্ষা দেয়ার পর রাকিব কয়েক মাস লেখাপড়া থেকে দূরে ছিল। তাই এই পুরো সময়টা কম্পিউটারে কাটাতো। তখন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে (ফেসবুকে) একটি আইডি খোলে। কয়েক মাসের ভেতরে তার বন্ধুর সংখ্যা ৩ হাজার ছাড়িয়ে যায়। ফেসবুকের মাধ্যমে কয়েকজনের সঙ্গে তার বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে ওঠে। তাদের একজন ছিল ইয়াছিন। মেসেঞ্জারে প্রায়ই ইয়াছিনের সঙ্গে রাকিবের কথা হতো। ইয়াছিন বিভিন্ন বয়সী নারীদের নুড ছবি ও ভিডিও রাকিবকে শেয়ার করতো। এসব ছবি ও ভিডিও দেখে আগ্রহ বাড়ে রাকিবের। ইয়াছিন কীভাবে এগুলো সংগ্রহ করে এ নিয়ে রাকিবের কৌতূহলের শেষ নাই। একপর্যায়ে ইয়াছিন নিজেই জানায় যে, বিভিন্ন নারীদের ফেসবুক আইডি হ্যাক করে তাদের মেসেঞ্জার থেকে এগুলো সংগ্রহ করে। এরপর রাকিবও বন্ধু ইয়াছিনের কাছ থেকে আইডি হ্যাকের কৌশল আয়ত্ত করে নেয়। তারপর পরবর্তী আড়াই বছরে রাকিব কয়েক হাজার তরুণীর আইডি হ্যাক করে সংগ্রহ করেছে নগ্ন ছবি ও ভিডিও। এসব ছবি দিয়ে ব্ল্যাকমেইল করে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে রাকিব। যদিও শেষ রক্ষা হয়নি। এক তরুণীর করা অভিযোগের ভিত্তিতে তাকে গ্রেপ্তার করেছে সাইবার ও স্পেশাল ক্রাইম ইনভেস্টিগেশন টিম।
তদন্ত সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানিয়েছে, ইয়াছিনের কাছ থেকে আইডি হ্যাকের কৌশল আয়ত্ত করে সফল হয় রাকিব। দিন-রাতের বেশির ভাগ সময় রাকিব ফেসবুকে কাটাতো। এভাবে প্রতিদিনই একের পর এক আইডি হ্যাক করতো। আইডি হ্যাকের জন্য সে ফিশিং লিংক তৈরি করতো। লুডু খেলা বা ক্রিকেট-ফুটবল খেলা, বিভিন্ন প্রতিযোগিতার প্রার্থী হিসেবে ভোট চাওয়া, লটারি জেতার মতো আকর্ষণীয় সব ফিশিং লিংক তৈরি করতো। তারপর পরিচিত-অপরিচিত বন্ধুদের মেসেঞ্জারে এসব লিংক পাঠাতো। কারও কাছে রাকিব বলতো সে একটি প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করেছে। ওই লিংকে ঢুকে তাকে একটি ভোট দেয়ার অনুরোধ জানাতো। আবার কাউকে লুডু লেখার আমন্ত্রণ জানাতো। কিন্তু যাদেরকে পাঠাতো তাদের এই লিংকে ঢুকতে হলে আইডি ও পাসওয়ার্ড দিতে হতো। যারা এই ভুলটি করতো তাদের আইডি চলে যেতো রাকিবের নিয়ন্ত্রণে। পরে এসব আইডির মেসেঞ্জারে ঢুকে সব ব্যক্তিগত ছবি-ভিডিও নিজের কাছে নিতো রাকিব। পরে এসব ভিডিও যার আইডি হ্যাক করেছে তার স্বজনদের কাছে পাঠিয়ে ছড়িয়ে দেয়ার হুমকি দিয়ে টাকা চাইতো। এভাবে অনেকেই তাকে টাকা দিয়ে বুঝ দিতেন।
তদন্ত সংশ্লিষ্টরা জানান, হ্যাক করা আইডি খুলে রাকিব খুঁজে বের করতো এসব তরুণীরা কার কার সঙ্গে ব্যক্তিগত ছবি শেয়ার করেছেন। তারপর সেগুলো তার কম্পিউটারে ফাইল করে রাখতো। তার মূল উদ্দেশ্যই ছিল ছবি ও ভিডিও। মূলত সে নিজেই এসব দেখে আনন্দ পেতো। পাশাপাশি হাতিয়ার হিসেবে এগুলো ব্যবহার করে ব্ল্যাকমেইল করতো। অন্তত অর্ধশতাধিক নারীকে ব্ল্যাকমেইল করে রাকিব প্রায় ১০ লাখ টাকা হাতিয়ে নেয়। রাকিবের প্রতারণার শিকার হয়ে অনেক নারী থানায় অভিযোগ করেন।