বঙ্গনিউজবিডি ডেস্ক: মাদক মামলায় গ্রেপ্তার চিত্রনায়িকা পরীমনিকে নিয়ে সারা দেশে চলছে আলোচনা-সমালোচনা। গত এক সপ্তাহ ধরে গণমাধ্যমের খবরের শিরোনামে ঠাঁই পেয়েছেন তিনি।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, উচ্ছৃঙ্খল ও বিলাসী জীবনযাপনে অভ্যস্ত নায়িকা পরীমনি গ্রামের নেহায়েত গরিব ঘরের মেয়ে। দামি ব্রান্ডের মদে বুঁদ হয়ে থাকা পরীমনির শৈশব কেটেছে গ্রামীণ সাদামাটা পরিবেশে। যেখানে পরিচ্ছন্ন ও সহজ-সরল মানুষের মাঝেই বড় হয়েছেন।
এ নায়িকার দাদার বাড়ি নড়াইল জেলার লোহাগড়া উপজেলায়। কিন্তু সেখানে কখনোই থাকেননি। তিনি বড় হয়েছেন নানা বাড়ি পিরোজপুরের ভাণ্ডারিয়ায় উপজেলার ইকড়ি ইউনিয়নের শিংখালী গ্রামে।
সেখানে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ডিগ্রি কলেজে পড়াশোনা করেছেন পরীমনি। কলেজের ভর্তির রেজিস্ট্রারের তথ্য অনুসারে, ১৯৯২ সালের ১৫ ডিসেম্বর জন্মগ্রহণ করেন পরীমনি। তার নাম শামসুন্নাহার স্মৃতি।
গ্রামের মানুষেরা এখনও তাকে মা-বাবা হারা এতিম স্মৃতি বলেই চেনে। সেখানে গেলে স্থানীয়দের যদি জিজ্ঞেস করা হয় চিত্রনায়িকা পরীমনির বাড়িটা কোন দিকে? তখন তারা পাল্টা প্রশ্ন করেন, গাজী বাড়ির স্মৃতির কথা বলছেন তো?
স্থানীয়রা জানিয়েছেন, স্কুল-জীবনে স্মৃতি ওরফে পরীমনি তুখোড় মেধাবী ছিলেন। তিনি প্রাইমারি পড়েছেন দক্ষিণ সিংহখালী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে এবং মাধ্যমিক পড়েছেন তার নানা বাড়ির পার্শ্ববর্তী মঠবাড়িয়া উপজেলার ভগিরাথপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে।
স্থানীয় সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান ও পিরোজপুর জেলা পরিষদ সদস্য মো. আব্দুল হাই হাওলাদার জানান, পরীমনির বাড়ি এখানে না হলেও তিনি নানা মো. শামসুল হক গাজীর বাড়িতে থেকে লেখাপড়া করে বেড়ে উঠেছেন। তবে তার বাড়ি নড়াইল জেলার লোহাগড়া উপজেলার সালাবাদ গ্রামে। তার বাবা মনিরুল ইসলাম ছিলেন একজন পুলিশ কনস্টেবল।
দক্ষিণ সিংহখালী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক বেলায়েত হোসেন বলেন, ‘পরীমনির নানি মরহুমা ফাতিমা বেগম দক্ষিণ সিংহখালী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাকালীন প্রধান শিক্ষিকা ছিলেন। তিনি মারা যাওয়ার পর আমি প্রধান শিক্ষক হই। ছোট থেকে স্মৃতি ভালো ছাত্রী ছিল। পঞ্চম শ্রেণিতে স্কুল থেকে একমাত্র সে ট্যালেন্টপুলে বৃত্তি পায়। এখন পর্যন্ত এই স্কুল থেকে আর কেউ বৃত্তি পায়নি। দেখতে খুব সুন্দর ছিল স্মৃতি। মা হারানো এতিম শিশুটিকে এলাকার সবাই অনেক আদর করত।’
মাদক মামলায় গ্রেপ্তার ও নিজের বাসাকে ‘মিনি বার’ বানিয়ে ফেলা এই নায়িকাকে নিয়ে এলাকাবাসী তেমন কোনো নেতিবাচক মন্তব্য করেননি। এলাকায় থাকাকালে তার কোনো ‘অপকর্ম’ নেই বলেও জানান তারা।
এ বিষয়ে ৯ নম্বর ওয়ার্ড সিংহখালী গ্রামের বাসিন্দা নুরুল ইসলাম বলেন, ‘টিভিতে দেখেছি মাদকসহ স্মৃতি (পরীমনি) গ্রেপ্তার হয়েছে। তবে এছাড়া পরে আরও যেসব অভিযোগ আনা হয়েছে কেন জানি আমাদের বিশ্বাস হচ্ছে না। যাই হোক, বিষয়টি আইন-আদালতের। কিন্তু আমাদের এলাকায় যতদিন থেকেছে পরীমনি, সে কোনো খারাপ কাজ-কর্মের সঙ্গে জড়িত ছিল না। ভালো মেয়ে ছিল। গ্রামে তার কোনো অপকর্ম নেই।’
তবে নায়িকা হওয়ার পর পরীমনির দুটি কাজে নাখোশ গ্রামবাসী। এলাকাবাসী জানায়, নায়িকা হওয়ার পরে নিজেকে অহংকারী হয়ে ওঠেন পরীমনি। এতিম সেই মেয়েটি ধরাছোঁয়ার বাইরে চলে যান। মাটিতে পা পড়ত না। ২০২০ সালে সিংহখালী গ্রামে পরীমনির বেড়াতে এসেছিলেন। খবর পেয়ে তার নিজের কলেজের কিছু ছাত্রী দেখা করতে গিয়েছিল তার নানা বাড়ি। কিন্তু তাদের সঙ্গে দেখা করেননি পরীমনি। বিষয়টিতে কষ্ট পেয়েছেন কলেজের সহপাঠীরা।
গ্রামবাসীদের আরেকটি অভিযোগ, নায়িকা হওয়ার পরে প্রতি বছর ঈদুল আজহায় এফডিসিতে ৫-৬টি গরু কোরবানি দেন পরীমনি। কিন্তু গ্রামবাসীকে নিয়ে আজ পর্যন্ত কোনো কোরবানি দেননি। নিজের গ্রামের মানুষদের এড়িয়ে চলার চেষ্টা করেছেন সব সময়। গ্রামের মানুষের সুখে-দুঃখে পাশে পায়নি পরীমনিকে।
প্রসঙ্গত, গত ৪ আগস্ট রাতে রাজধানীর বনানীতে নিজ বাসা থেকে মাদকসহ গ্রেপ্তার আলোচিত-সমালোচিত চিত্রনায়িকা পরীমনি। দ্বিতীয় দফায় রিমান্ডে নিতে গতকাল মঙ্গলবার তাকে আদালতে হাজির করা হয়েছিল। বিষয়টি জানতে পেরে পরীমনিকে একনজর দেখতে আদালত প্রাঙ্গণে এসেছিলেন নানা শামসুল হক। কিন্তু নাতনিকে দূর থেকে দেখার সুযোগ হলেও কথা বলা সম্ভব হয়নি। তার দুদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত।